কুষ্টিয়ায় মুজিববাদী চেতনা সমূলে উচ্ছেদ, ভারতপন্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৪নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ গেটের সামনে আল খিদমাহ অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আল খিদমাহ অর্গানাইজশনের সদস্যবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, আমরা এখানে কেন দাঁড়িয়েছি অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, বড় বড় নেতা অনেকেই পালিয়ে গিয়েছে, অনেককে জেলে ঢোকানো হয়েছে, তাহলে কেন আবার আন্দোলন।
উত্তরটা সকলের জানা থাকা দরকার। আমরা যদি মনে করি শেখ হাসিনা পালিয়েছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ হয়েছে, কিছু নেতাদের আটক করা হয়েছে এর মানেই আওয়ামী সরকার, ফেসিস্ট সরকার, মুবিজবাদ সমূলে উৎখাত হয়েছে একেবারে বিদায় নিয়ে গেছে তাহলে এটা ভুল। আমরা বাহ্যিকভাবে দেখছি যে শেখ হাসিনা পালিয়েছে, কিছু সংখ্যক নেতা পালিয়েছে কিন্তু আসলে কি তারমানে আওয়ামী ফেসিস্ট জুলুম, নির্জাতন চিরতরে নির্মুল হয়েছে? আসলে না হয়নি। আপনারা দেখে থাকবেন আমরা যারা চাষাবাদ করি, জমির মধ্যে অনেক রকম আগাছা থাকে, ঘাস থাকে, সেগুলো যদি উপর থেকে কেটে ফেলা হয় দুদিন পরে সেগুলো আবার জন্মায়। আমরা যখন বড় অগ্নিকুণ্ড দেখি সে আগুন যদি পানি দিয়ে নিভিয়ে দেওয়া হয় এবং কিছুটা যদি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকে যায় তাহলে সে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকে আবার আগুনের জন্ম হয়।
ঠিক তেমনইভাবে আমরা যে আ’লীগ কে বিদায় করেছি, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এগুলো উপর থেকে আমরা গাছ কেটে দিয়েছি মাত্র, বিশাল অগ্নিকুণ্ডকে নিভিয়েছি মাত্র কিন্তু যেই আগাছা রয়ে গেছে, আমরা অগ্নিস্ফুলিঙ্গকে পুরোপুরি নিভিয়ে দিতে পারি নাই। এখনও অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নিভু নিভু করে জ্বলছে, আগাছা এখনও বের হওয়ার পথ খুঁজছে। আপনারা একটু গভীর দৃষ্টি দিলে দেখতে পারবেন। জুলাইয়ের পরে এখনও বড় বড় ব্যবসায়ী যারা মাথা আছে, যারা আওয়ামী চাটুকদার ছিল আওয়ামী সরকারের দালাল ছিল তারা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। বড় বড় চাকরিজীবী যারা ছিল যারা আওয়ামী ফেসিস্ট সরকারের মদদে চাকরি নিয়ে ছিল তারা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। বড় বড় মিডিয়ার যারা মাথা, সাংবাদিক যারা তারা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।
সুতরাং আমরা যদি মনে করি, আমরা যদি এই চিন্তায় আরামে ঘুমাতে থাকি যে শেখ হাসিনা পালিয়েছে বলে আমরা আরামে থাকবো, শান্তিতে থাকবো তাহলে আমাদের ভুল হবে। কখন আমরা দেখতে পারবো চট করে সে ঢুকে পরবে, হুট করে চলে আসবে। এজন্য তাদেরকে সমূলে উচ্ছেদ করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, মুজিববাদ বা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, ৭৫এর বাকশাল বিলুপ্তির পরবর্তী সময়ে কিভাবে ফিরে আসলো। মুজিববাদ ফিরে আসছে দুইটা খুঁটির উপর ভর করে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বা মুজিববাদের রাজনৈতিক বয়ান জারি ছিল আর সাংস্কৃতিক বয়ান জারি ছিল। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বা মুজিববাদের রাজনৈতিক বয়ান কোনটা সেটা হচ্ছে ৭২ এর সংবিধান। যে সংবিধান ছিল বাংলার গণমানুষের ব্শ্বিাস, চেতনা, মুল্যবোধ বিরোধী ছিলো ৭২ এর সংবিধান।
এই মুজিববাদি সংবিধান যতদিন বহাল তবিয়তে থাকবে ততদিন পর্যন্ত এই বাংলার বুকে মুজিববাদের রাজনৈতিক বয়ান জারি থাকবে, কাঠামোগতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং এই কাঠামোগত রাজনৈতিক সুযোগ নিয়ে তারা পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে আসার অপচেষ্টা চালাবে। এই যে বাংলাদেশে ফিরে আসা বা টিকে থাকার একটা অংশ মুজিববাদের রাজনৈতিক বয়ান এবং মুজিববাদের টিকে থাকা বা ফিরে আসার আর একটি কারন হচ্ছে সাংস্কৃতিক বয়ান। বাকশাল বিলুপ্তির পরে ৭৫ পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিব ছিল না শেখ হাসিনা ছিল না বাংলাদেশে কিন্তু ছিল কি? ছিল হচ্ছে মুজিববাদের সাংস্কৃতিক জমিদাররা ছিল। কারা এরা? এরা কোথায় থাকে? এরা আমাদের বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য, মিডিয়া, সুশিল সমাজ, বুদ্ধিজীবী অঙ্গনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জুলাই পরবর্তী সময়ে এরা কিছুটা গোপনে আছে, লুকিয়ে আছে কিন্তু এরা এদের সরযন্ত্র, এদের বাংলাদেশ বিরোধি কার্যক্রম, বাংলাদেশের উপর চিরতরে মুজিববাদকে চাপিয়ে দেওয়া, বাংলাদেশ আ’লীগকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য গোপনে সরযন্ত্রে লিপ্ত হয়ে আছে। আমাদেরকে এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে। আমাদেরকে রাজনৈতিক বয়ান ও সাংস্কৃতিক বয়ান বুঝতে হবে। আমরা যদি বাংলার বুক থেকে এই মুজিববাদকে উৎখাত করতে চাই তাহলে আমাদেরক ৭২এর সংবিধান এবং মুজিববাদের যে সাংস্কৃতিক বয়ান আছে এই বয়ানগুলোকে ভাঙতে হবে এবং বাংলার জমিন থেকে উৎখাত করতে হবে ইনশাআল্লাহ।