কুষ্টিয়া কুমারখালীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। রবিবার রাত ৮ টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। একদিকে বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দে দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা। গতকাল রবিবার (১৩অক্টোবর) কুমারখালী ইকোপার্ক এলাকার গড়াই নদীতে দেবী দুর্গার বিসর্জন শুরু হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ সব ধরনের মঙ্গল কামনা ও অশুভকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। একই আঙিনায় মসজিদ ও প্রতিমা বিসর্জন। বছরের পর বছর ধরে মিলেমিশে মুসলিম সম্প্রদায়ের ইবাদত আর হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিমা বিসর্জন চলছে পাশাপাশি।
সময়মতো হচ্ছে আজান ও নামাজ, নিয়ম করে চলে পূজাঅর্চনাও ও প্রতিমা বিসর্জন। এভাবে, ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পৃথক দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল নিদর্শন রয়েছে কুমারখালীর পৌর শেরকান্দি গ্রামে। উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এডভোকেট জাকারিয়া আনছার মিলন বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আমরা হিন্দু-মুসলিম একই পরিবারের সদস্য হিসেবে বসবাস করে আসছি। এলাকায় কখনো ধর্ম নিয়ে কোনও বিরোধ হয়নি। এলাকার মানুষ মনে প্রাণে অসাম্প্রদায়িক। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
কুমারখালী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নব কুমার দও বলেন, এই গ্রামে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি হলেও কখনো পূজা-অর্চনা করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হইনি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা মিলেমিশে এখানে বসবাস করছি। এ দিকে সন্ধ্যার পর থেকেই একে একে আসতে থাকে প্রতিমা বহনকারী বিভিন্ন শোভাযাত্রা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রতিমাগুলো ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় নদীতে। তারপর মঙ্গলধ্বনি, উলুধ্বনি, শাঁখ আর ঢাকের ধ্বনিতে দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় গড়াই নদীতে। আবারও মঙ্গল বার্তা নিয়ে আগামী বছর যেন মা দুর্গা আগমন করেন, বিসর্জনকালে সেই প্রার্থনা করেন ভক্তরা।
এবার কুমারখালী উপজেলাতে ৫৪ টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। সাবেক পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিক বলেন, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আমাদের এখানে শারদীয় দুর্গোৎসব ও প্রতিমা বিসর্জনের কাজ শেষ হয়েছে। আমাদের কুমারখালীতে ইকো পার্ক এলাকায় মসজিদের পাশেই এই প্রতিমা বিসর্জন হয়। আযান ও নামাজের সময় ঢোল, গান, বাজনা বন্ধ রাখা হয়।
দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মধ্যে এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সারা জীবন থাকতে বলে আশা করি। কুষ্টিয়া পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জয়দেব কুমার বিশ্বাস বলেন, জেলায় ২২৯ টি দুর্গাপূজা হয়েছে। কোন সমস্যা ছাড়াই আমাদের প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। কুমারখালীতে এবার ৫৪ টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে, আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ আরো শক্তিশালী হবে। এই জেলায় কোন উগ্রবাদীদের ঠাঁই হবে না। কুমারখালী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মিকাইল ইসলাম জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শুরু থেকেই কঠোর নজরদারিতে রেখেছিল। উপজেলার কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই প্রতিমা বিসর্জনের কাজ শেষ হয়েছে।