২০১৮ সালের ২৩ জুলাই (রোববার) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে আদালতের বারান্দা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট কারে ওঠার পর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা হয়। ঐ দিন বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে কটূক্তি করে বক্তব্যে দেওয়ার অভিযোগে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ইয়াসির আরাফাত ওরফে তুষারের দায়ের করা মানহানি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই (রোববার) বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক এম এম মোর্শেদ ১০ হাজার টাকা জামানতে স্থায়ীভাবে এই জামিন মঞ্জুর করেন।
২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত। এদিকে মাহমুদুর রহমান জামিন নিতে আসছেন—এমন খবর পেয়ে আগে থেকে আদালত চত্বরে ছাত্রলীগ সভাপতি ইয়াসির আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে আদালত চত্বরে অবস্থান নেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারাও কালো পতাকা মিছিলসহ হামলায় অংশ গ্রহন করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামিন হলেও হামলার ভয়ে আদালতের এজলাসে অবস্থান নেন মাহমুদুর রহমান।
এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সেখানে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বললে তিনি বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কারে উঠে রওনা হন। গাড়িতে ওঠার পরপরই আচমকা তাঁর ওপর প্রথমে স্যান্ডেল ছুড়ে মারেন ছাত্রলীগের এক কর্মী। এরপর চারদিক থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়ে যায়। এ সময় গাড়ির কাঁচ ভেঙে কয়েকটি ইট তাঁর মাথায় ও মুখে লাগে। এতে তাঁর গাল, কপাল ও মাথার পেছনে কেটে যায়। হামলার মধ্য থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে গাড়ি থেকে বের করে আইনজীবীরা একটি চেম্বারে নিয়ে যান। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ওই আইনজীবীর চেম্বারে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের বেশ কয়েকজনের মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল।
এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করলে তাঁদের ওপর চড়াও হন হামলাকারীরা।এদিকে ঐ হামলার ঘটনায় ৬ বছর পর ১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ২০২৪ সালে মাহমুদুর রহমান নিজে বাদি হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাবেকপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এই মামলায় ছাত্রলীগের নেতা কর্মি সহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কর্মির নাম এজাহার থেকে বাদ পড়েছে বলে জানা যায়। হামলার সময় ধারণকৃত ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাহমুদুর রহমানের গাড়ীতে যিনি প্রথম ইট দিয়ে যিনি আঘাত করেন তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
এদিকে এজাহারে রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নাম না থাকার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিক মহল সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। রাকিবুল ইসলাম রাকিব ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। জেল হাজতেও যেতে হয়েছিলো তাকে।ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্র লীগের পদ নেওয়া থেকে শুরু করে রাকিবুল ইসলাম রাকিবের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
রাকিবের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্যসহ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা বানানোর কথা বলে আর্থিক বাণিজ্যের অভিযোগ সেই সময় একাধিক জাতীয় পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিমের দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (আইসিটি) মামলায় রাকিবকে ৮ নভেম্বর (শুক্রবার) ২০১৯ ইং তারিখে রাতে কুষ্টিয়া শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।মাহমুদুর রহমান ওপর হামলার বিষয়ে জানতে রাকিবুল ইসলাম রাকিবের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঐ দিকে কোর্টে উপস্থিত ছিলাম কিন্তু হামলার সাথে জড়িত ছিলাম না। হামলার ভিডিও ফুটেজ এর বিষয়ে জানাতে চাইলে, তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।