অন্তর্বর্তী সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও রাজনৈতিক দলগুলোতে বইছে নির্বাচনি হওয়া। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দেশে বর্তমানে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৫৩টি। এর অর্ধেকই আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়। সে লক্ষ্যে নিয়েই চলছে দলগুলোর ভিতরে-বাইরে নানা প্রস্তুতি। একাদিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ বাদে অন্য দলগুলো প্রতিটি আসনে প্রার্থী দিতে কাজ শুরু করেছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জোট করে ভোট করলেও আগামীতে এককভাবে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন দুই দলের নেতারাই।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসা কিংবা আসন ভাগাভাগি করে বিরোধী দল হওয়া জাতীয় পার্টিও চায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এককভাবে সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে।
অতিসম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), আমার বাংলাদেশ পার্টিও (এবি পার্টি) ৩০০ আসনে প্রার্থীর সন্ধান করছে।
নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন কখন কীভাবে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলে দল কীভাবে অংশ নেবে সে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখন ৩০০ আসন কেন্দ্র করে সারা দেশে দলকে সংগঠিত করা হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে বলেছেন, জামায়াত আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। তরুণ নেতৃত্ব দেখতে চায়। তরুণ প্রজন্মই পারে মানুষকে নতুন কিছু দিতে। আর আমরাই সেটা পারব বলে বিশ্বাস করি। যখন নির্বাচন হবে আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। মানুষ যে পরিবর্তন চাইছে, আমরাই হব সে পরিবর্তনের একমাত্র ভরসা।
বিএনপি-জামায়াত-এবি পার্টি-গণ অধিকার পরিষদই নয়, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, এলডিপি, জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল পিপলস পাটি-এনপিপি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, তৃণমূল বিএনপি, গণসংহতি আন্দোলন-এসব দলের অধিকাংশই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ ছাড়া নিবন্ধিত দলগুলোর বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে টানা তিনবার বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টিও আগামী সংসদ নির্বাচন এককভাবে করবে বলে জানা গেছে। নির্বাচন বিষয়ে দলের ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের আগামীতে একক নির্বাচনের লক্ষ্যে সারা দেশে সংগঠন শক্তিশালী করছেন।
ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ভোট করার লক্ষ্যে দলকে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করা হচ্ছে। আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব।
বিএনপি এককভাবে নাকি আন্দোলনের সাথিদের নিয়ে একসঙ্গে ভোট করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামীবিরোধী ইসলামী দলগুলো নিয়েও একটি জোট গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের।
জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর একসঙ্গে চললেও ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপি-জামায়াতের বিরোধ অনেকটা প্রকাশ্যে আসে। দল দুটির নেতারা একে অন্যকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিএনপি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চাইলেও জামায়াত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন নিয়ে চাপ না দেওয়ার কথা বলছে। জামায়াত নেতারা বলছেন, গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় এবং ভোট পর্যন্ত বর্তমান পরিস্থিতির বদল না হলে আগামী নির্বাচন হতে পারে ‘বিএনপি বনাম জামায়াত’। আওয়ামী লীগবিরোধী সব দল নিয়ে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী একটি নির্বাচনি জোট গঠনেরও পরিকল্পনা আছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন সামনে রেখে নানা ছক কষছে জামায়াতে ইসলামী। ধর্মভিত্তিক দল ছাড়াও বিএনপির সঙ্গে একসময় যুগপৎ আন্দোলন করা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে পাশে রাখতে চাচ্ছে দলটি। এসব দলকে এক প্ল্যাটফরমে এনে নির্বাচনি জোটে রূপান্তরের পরিকল্পনা জামায়াতের।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দল বা জোটগত যা-ই বলেন, ৩০০ আসনে ভোট করাই আমাদের টার্গেট। তবে ভোট কীভাবে হবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়। সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, ‘৩০০ আসনেই আমরা যোগ্য প্রার্থী দেব। নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা যারা ধারণ করে এমন প্রার্থী খুঁজছি আমরা।