ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হল ডাইনিংগুলোর খাবারের দাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ভর্তুকি সংকটে দিনদিন খাবারের মান কমলেও এ বিষয়ে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত আট বছরে কয়েক দফায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের ফি বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি ডাইনিংয়ের ভর্তুকি। ফলে মানহীন খাবার খেয়েই দিনাতিপাত করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আট হলের শিক্ষার্থীদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক হলগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী মিলরেট ৩০ থেকে ৪০ টাকা হলেও ডাইনিং ম্যানেজাররা মেন্যুভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। গত আট বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে হল ফি বেড়েছে প্রায় চারগুণ। এর বিপরীতে ভর্তুকি মাত্র ২০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মিল প্রতি বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে মাত্র এক টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে আবাসিক হলে ফি ছিল ৭১৮ টাকা। পরে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসহ আনুষঙ্গিক ফি বাড়িয়ে প্রায় তিন গুণ করা হয়। একই সঙ্গে ওই শিক্ষাবর্ষ থেকে এক হাজার ৮৭২ টাকা আবাসিক হলের ফি করা হয়। এছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আরেক ধাপে বৃদ্ধি করা হয় আবাসিক হল ফি। দ্বিতীয় ধাপে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফি বৃদ্ধির পর আবাসিক ফি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১৮০ টাকায়। যা ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের থেকে দুই হাজার ৪৬২ টাকা বেশি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে হলের ডাইনিংয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীর প্রতি মাসিক ভর্তুকি ছিল ৮০ টাকা। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ভর্তুকি বেড়েছে ২০ টাকা অর্থাৎ ০.২৫ গুণ।
এরপর আর কোন ভর্তুকি বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত আনুষঙ্গিক ফি ও হলের খাবারের দাম বাড়লেও ভর্তুকি ও খাবারের মান বাড়ে না। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে খাবারে পোকা পাওয়া যায়। আবাসিক হলগুলোতে পঁচা-বাসি খাবারও দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পেটের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। এছাড়াও ডাইনিংয়ে খাবার প্লেটের সংকটের ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত সময় অপচয় হয়। এদিকে খাবারের মান নিয়ে বার বার অভিযোগ করলেও প্রশাসন থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের সর্ব্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই বিশ্ববিদ্যালয় হলের ডাইনিংয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিশেষ করে প্রতিদিনই একই সবজি রান্না করা হয়। যার ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। প্রতিবছর বাজেটের পরিমাণ বাড়ানো হলেও হলে খাবারের মান তুলনামূলক ভাবে বাড়েনি। তাই মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একাধিক হলের ডাইনিং ম্যানেজার জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। একেকটা দ্রব্য আগের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু খাবারের জন্য প্রশাসন থেকে যা ভর্তুকি দেওয়া হয় তা বৃদ্ধি করা হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতি মিলে এক টাকা হিসেবে ভর্তুকি প্রদান করা হয়।
কোন কোন সময় এটাও কয়েক মাস আটকে থাকে। ফলে আমরা এই উর্ধ্বমুখী বাজারে খাবারের মান বৃদ্ধি করতে চাইলেও পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ.টি. এম. মিজানুর রহমান বলেন, পূর্বে হল ডাইনিংয়ের জন্য যে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল সেটি গত জুলাই মাস থেকে বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য খাত থেকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আপাতত এই ভর্তুকি বাড়ানোর সুযোগ নেই। তবে হল ডাইনিং সংশ্লিষ্ট অন্য যে সকল সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা যে সকল অভিযোগ করেছে এগুলো বাস্তবিক। এ সমস্যাগুলো প্রায় সব হল ডাইনিংয়েই রয়েছে। আর ভর্তুকির যে বিষয়টি, এটা আসলেই বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রশাসনের নিকট আবেদন করবো যাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা হয়। আর অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধানেও একই ভাবে আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।