কুষ্টিয়ায় শিশুদের নিউমোনিয়াাসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঠান্ডা, জ্বর ও সর্দি কাশিতে আক্রান্ত্র হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার বিপরীতে ৪শতর অধিক শিশু ভর্তি থাকছে। শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছে শত শত শিশু।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের সামনের বারান্দার মেঝে শিশু রোগীতে ঠাসা। বারান্দার পাশে মেডিসিন ওয়ার্ড এবং শিশু ওয়ার্ড ইউনিট-২ তেও শিশু রোগী রাখা হয়েছে। সেখানেও গাদাগাদি বিছানা শিশুদের। হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের ভেতরেও শিশু রোগীদের ভিড় লক্ষণীয়। বুধবার সকালে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মা মৌসুমী খাতুন। বারান্দার মেঝেতে শুইয়ে রাখা আট মাসের শিশু ফাহিমের পাশে বসে তিনি জানান, কয়েকদিন ধরেই তার ছেলের ঠান্ড-জ্বর। কোনো উন্নতি না হওয়ায় তিনি চিন্তিত।
সদর উপজেলার হাটশ হরিপুরের ফরিদা আক্তার তিন বছরের মেয়ে নাদিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। নাদিয়ার গায়ে জ্বর, রয়েছে শ্বাসকষ্ট। গ্রাম্য ডাক্তারকে দেখিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, কিন্তু কোনো উন্নতি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। অতিরিক্ত শিশু রোগীর চাপ সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলেশন ওয়ার্ডকে শিশু ইউনিট-২ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এতেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের ওয়ার্ডের মেঝেতেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
জানা যায়, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের ৪টি রুমে মাত্র ২০টি শয্যা রয়েছে। অথচ ২০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ৪শত’র অধিক শিশু হাসপাতালে ভর্তি থাকছে। হাসপাতালে কর্মরত ৯/১০ জন চিকিৎসককে এই বিপুল সংখ্যক শিশু রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হচ্ছে। ৯ জন নার্স শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছে। চলতি অক্টোবর মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে শিশু রোগীদের চাপ ভয়াবহ রকম। প্রতিদিন গড়ে ৪ শতরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকছে। নতুন করে শতাধিক শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
২৫০ শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এর বাইরেও বহির্বিভাগে আরও ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। কুষ্টিয়া ছাড়াও মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও রাজবাড়ী জেলার রোগীরাও এই হাসপাতালে ছুটে আসেন। ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ছিল ৪০১ জন। এর মধ্যে ছেলে শিশু ২৪৯ জন এবং মেয়ে শিশু ১৫২ জন।
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স সফুরা জানান, গত দুই সপ্তাহ যাবত শিশু রোগী ভর্তির হার বেশি। ওয়ার্ডের ধারণক্ষমতার চেয়ে ২০ গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক রোগীকে সামাল দিতে চিকিৎসক নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।