সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
কুমারখালীর তৈরি পরচুলা বিদেশে রপ্তানি ; অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে গ্রামের নারী শ্রমিকরা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন তাবলিগের সাদপন্থি নেতা মুয়াজ বিন নূরের ছাত্রত্ব ও সনদ বাতিল দিল্লিতে ব্যাপক ধর-পাকড় অভিযান, ১৭৫ বাংলাদেশি শনাক্ত মিরপুরে কিশোর কন্ঠ মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের তরুণরা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, শুধু চাঁদাবাজের পরিবর্তন হয়েছে- আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় হাসনাত আবদুল্লাহ শীতে যেসব খাবার খেলে শিশুরা সুস্থ থাকবে কুমারখালীতে ইটভাটায় করাত কল বসিয়ে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দুর্নীতিতে কুষ্টিয়ায় উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম

কুষ্টিয়ার দুই‘শ বছরের ঐতিহ্য বিখ্যাত তিলের খাজা

নিজস্ব সংবাদদাতা / ৩২ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ৮:০৪ পূর্বাহ্ন

তিলের খাজা, কুষ্টিয়ার নামের সঙ্গেই মিশে আছে এই মুখরোচক খাবারটি। নানা রকম হাঁকডাকে রেল স্টেশন, বাস স্টেশন ও লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয় বিখ্যাত তিলের খাজা। কুষ্টিয়ার এই তিলের খাজা এখন পরিণত হয়েছে ক্ষুদ্র শিল্পে। সারা বছরই তৈরি করা হয় তিলের খাজা। তবে শীত মৌসুমে এর আলাদা কদর রয়েছে। কুষ্টিয়ার তিলের খাজার নাম শোনেনি বা খায়নি এমন মানুষ বাংলাদেশে পাওয়া মুশকিল। কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী উপজেলাতে এ পেশার সঙ্গে জড়িত কয়েকশ’ পরিবার। হাতে তৈরি খেতে সুস্বাদু এ তিলের খাজা দুইশ’ বছরের ঐতিহ্য। কুষ্টিয়ার তিলের খাজার নাম শুনলে জিভে পানি আসে না এমন লোকের সংখ্যা কমই আছে। এক সময় শুধু স্থানীয় চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তিলের খাজা তৈরি করা হতো। কালের আবর্তে এর কদর বেড়েছে দেশজুড়ে। প্রায় দুইশ’বছরের সময়কাল ধরে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা। সম্প্রতি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিললেও নানা প্রতিবন্ধকতায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না এ ক্ষুদ্রশিল্প। জনপ্রিয়তার দিক দিয়েও দারুণভাবে এগিয়ে স্বল্পমূল্যের এ স্থানীয় খাবারটি। কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী উপজেলার কয়েকশ পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত।রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্টেশন ও লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হতে দেখা যায় হাতে তৈরি তিলের খাজা। এ খাজার ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কুষ্টিয়ার তিলের খাজার উপস্থিতি মেলে। দু‘শত বছরের এ খাদ্যপণ্যটি এখন ক্ষুদ্রশিল্পে রূপ নিয়েছে। কুষ্টিয়ার মাটি ছাড়িয়ে এটি এখন অন্যান্য জেলায়ও তৈরি হচ্ছে। ঠিক কবে থেকে এ তিলের খাজার উৎপাদন শুরু এর সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
তবে জানা যায়, অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের কুষ্টিয়া শহরে বেকারি পণ্যের জন্য পরিচিত দেশওয়ালী পাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাল সম্প্রদায়ের মানুষ এ খাবার তৈরি করতেন। ১৯০০ সালের কাছাকাছি সময়ে ‘তেলি’ সম্প্রদায়ের লোকদের মাধ্যমে এ খাবারটি প্রথম কুষ্টিয়ায় তৈরি হয়। কুষ্টিয়ার এক খামারে কাজ করাতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ‘তেলি’ সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে ভারতের অন্য অঞ্চল থেকে এখানে আনে। ৭০-এর দশকে কুষ্টিয়া শহরের চর মিলপাড়ায় কয়েকটি খাজা তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই কুষ্টিয়ায় ধীরে ধীরে তিলের খাজার প্রসার ঘটতে থাকে। ক্রমেই কুষ্টিয়ার তিলের খাজার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও।

তিন ধরনের তিলের খাজা তৈরি হয় তিলভেদে। খাজা তৈরির প্রধান উপকরণ তিল ও চিনি। চুলায় চাপানো বড় লোহার কড়াইয়ের মধ্যে চিনি দিয়ে আগুনে জাল দিয়ে তৈরি করা হয় ‘সিরা’। নির্দিষ্ট সময় পর নামানো হয় চুলা থেকে। হালকা ঠান্ডা হলে চিনির সিরা জমাট বেঁধে যায়। তখন শিংয়ের মতো দো-ডালা গাছের সঙ্গে হাতে টানা হয় জমাট বাধা সিরা। একপর্যায়ে বাদামি থেকে সাদা রঙে পরিণত হলে বিশেষ কায়দায় হাতের ভাঁজে ভাঁজে টানতে হয়। তখন এর ভেতরে ফাঁপা আকৃতির সৃষ্টি হয়। সিরা টানা শেষ হলে রাখা হয় পরিষ্কার স্থানে। নির্দিষ্ট মাপে কেটে তাতে মেশানো হয় খোসা ছাড়ানো তিল। এভাবেই তৈরি হয়ে গেলো তিলের খাজা। পরে এগুলো প্যাকেটজাত করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। আরো এক ধরনের তিলের খাজা আছে, তাতে দুধ মেশানো হয়। কারখানায় প্রতিদিন ‘তিলের খাজা’ তৈরি হয়। চিনি ও দুধ স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হলেও তিল কেনা হয় যশোর ও ফরিদপুর থেকে। ভালোমানের তিল পাহাড়ি অঞ্চল থেকেও সংগ্রহ করা হয়। সাধারণ তিলের খাজা ১৮০ ও স্পেশাল তিলের খাজা ৩৫০ টাকা কেজি এবং এক প্যাকেট ১০-২০ টাকায় বিক্রি হয়। তিলের খাজা তৈরির কারখানার মালিক সাধারণত শ্রমিকরাই। কুষ্টিয়ার মিলপাড়ার আবদুল মজিদ তিলের খাজা কারখানার প্রবীণ কারিগর। ৪৫ বছর ধরে তিনি এ পেশায়। তার ১ নম্বর নিউ স্পেশাল ভাই ভাই তিলের খাজা কারখানায় আছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক-মালিক।
জানা গেছে, সারাবছরই তৈরি করা হয় তিলের খাজা। তবে শীত মৌসুমে এর আলাদা কদর রয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এ শিল্প। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় দুটি তিলের খাজা তৈরির কারখানা আছে। এরমধ্যে জয়নাবাদ এলাকায় একটি, অপরটি মিলপাড়ায়। জয়নাবাদে সবচেয়ে নামকরা ১নং নিউ স্পেশাল ভাই ভাই তিলের খাজা কারখানাটি অবস্থিত। কথা হয় কারখানা মালিকের ছেলে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি আমরা জেনেছি
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. শারমিন আকতার বলেন, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াটা আমাদের জন্য গৌরবের। এ পণ্যের বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। ক্ষুদ্র এ শিল্পটাকে এগিয়ে নিতে স্বাস্থ্যগত মান ঠিক রাখতে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কীভাবে যথাযথ উন্নয়ন ঘটিয়ে এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা দেখবো।


এ জাতীয় আরো খবর ....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর